"সাজ্জাদের শরীরে এখনো দুইটা গুলি আছে..."
শেফাতুল কাদের সাজ্জাদরা বাঁশখালিতে আন্দোলনের প্ল্যান করে প্রথমে দুয়েকবার মৃত্যুর হুমকি পান। ৪ তারিখ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন যে, আর দেরি করা যায় না। নামেন, আর বীরের মতই লড়াই করেন৷
৪ তারিখ উনাদের প্ল্যান ছিল তিনটা আলাদা এলাকা থেকে তিনটা মিছিল এসে চাম্বল বাজারে একত্রিত হবেন। উনাদের মিছিলটা আসে, আরেক এলাকার মিছিলে পথেই পুলিশ গুলি চালায়, আরেক এলাকার খবর উনারা আজ পর্যন্ত পান নাই, হয়ত ওদেরকে বাড়ি থেকেই বের হইতে দেওয়া হয়নাই।
চাম্বল মেইন রোডে ছাত্রলীগের সাথে প্রথমে কয়েকবার ধাওয়া পালটা দাওয়া হয়, তারপরে সন্ত্রাসীগুলা গুলি নিয়ে নামে। এই পরিমাণ অস্ত্র ওদের কাছে ছিল যে, এক দফাতেই দুইশ লোকের মধ্যে ৬০ এর কাছাকাছি লোক গুলি খেয়ে ফেলে।
সেই প্রত্যন্ত বাঁশখালিতে না ছিল মেডিকেল, না ছিল কোনো ডাক্তার। এতগুলা গুলিবিদ্ধ লোক কিভাবে রক্তাক্ত দেহে সার্ভাইব করে যান, সেই ঘটনা নারকীয়!
এক পল্লি চিকিৎসকের কাছে একে একে সবাই রক্ত বন্ধ করান। তারপর গায়ের মধ্যে গুলি নিয়েই লুকায়ে লুকায়ে বাড়ি ফিরেন।
যন্ত্রণায় যে একটু কাতরাবেন সেই উপায়ও কি ছিল? রাতে যেকোনো সময় পুলিশ রেইড দিতে পারে, ছাত্রলীগ হামলা করতে পারে। কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে লুকান, কেউ কেউ নিজের বাড়িতেই সারাটা রাত আতংকে কাটায়ে দেন।
সাজ্জাদের গায়ে গুলি ঢুকে মোট ৫টা। সবগুলা পিছনের সাইডে। দুইটা মাথায়, একটা সরাসরি মেরুদণ্ডে, আর দুইটা দুই উরুতে।
তিনটা বের করছেন, দুইটা বের করতে পারেন নাই। ডাক্তার জানাইছেন, মেরুদণ্ডের গুলিটা বের করতে গেলে সাজ্জাদ হয়ত সারাজীবনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে যাবেন।
সাজ্জাদের বয়স ১৯। এবার ভার্সিটি এডমিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু সাজ্জাদ বেশিক্ষণ কিছু মনে রাখতে পারেন না। মাথার রয়ে যাওয়া গুলিটার কারণে মনে হয় মাথার ভিতর সারাদিন ভারি কি যেন একটা বয়ে বেড়াচ্ছেন। মেরুদণ্ডের গুলিটার কারণে বেশিক্ষণ এক জায়গায় বসেও থাকতে পারেন না।
বাঁশখালি চাম্বলের আন্দোলনের ৬০ জন বীরের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা পাইছেন, কিন্তু কেউই কোনো সরকারি ফান্ড পান নাই। ৫টা গুলি খাওয়া সাজ্জাদ জানান, এমন অনেকেই আছেন যাদের অবস্থা উনার চাইতেও গুরুতর!
কেউ জানেনা সেই দুপুরে এক প্রত্যন্ত এলাকায় কিভাবে সাজ্জাদেরা লড়াই করে গেছিল, কেউ খবর রাখে না শরীরের ভিতর এখনো গুলি নিয়ে সাজ্জাদ কিভাবে দিন পার করতেছেন!
অপমানও কি সহ্য করেন নাই? সিএমএইচে ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে, ফান্ডের বিষয়ের আলাপে কেন্দ্রীয় এক সমন্বয়কের পাশে দাঁড়ানো একজন থেকে শুনছেন, 'আরে ওর কিছুই হয়নাই! আসছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে টাকা মারতে!'
শরীরে দুইটা গুলি আর রাষ্ট্রীয় সমস্ত অবহেলা নিয়েও দেখেন না, ছবিতে কি সুন্দর হেসে পোজ দিলেন!
০৩ জানুয়ারী, ২০২৫।